BD Arena


Join the forum, it's quick and easy

BD Arena
BD Arena
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

Go down

তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না Empty তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

Post by Tonmoy Fri Dec 16, 2011 1:06 am



[You must be registered and logged in to see this image.]
শহীদ আবুল হোসেন, বীর প্রতীক



শহীদ আবুল হোসেন, বীর প্রতীক
দুঃসাহসী এক মুক্তিযোদ্ধা


ট্রাফিক সিগন্যালের লাল বাতির সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটি গাড়ি। তার ভেতরে আছে মন্ত্রীর গাড়ি। হঠাৎ সেই গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল একটি মোটরসাইকেল। তাতে দুজন আরোহী। আবুল হোসেন ও এনায়েত। তাঁরা দ্রুত গাড়ির জানালা দিয়ে গ্রেনেড ও ফসফরাস বোমা ছুড়ে বিদ্যুৎগতিতে উধাও হয়ে গেলেন। চার-পাঁচ সেকেন্ড পরেই ঘটল বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠল গাড়িটি। এ সবকিছু ঘটল আট-১০ সেকেন্ডের মধ্যে। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ঢাকা মহানগরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে।

২ নম্বর সেক্টরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা তখন গোপনে অবস্থান করছিলেন পুরান ঢাকায়। তাঁরা প্রাদেশিক সরকারের উচ্চপদস্থ বিশেষ কেউ বা সমপর্যায়ের কারও ওপর অপারেশন করার জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন। একদিন তাঁরা সেই সুযোগ পেয়ে গেলেন। সেদিন বেলা ১১টার দিকে লালবাগের এক রেস্তোরাঁয় জলযোগ করছিলেন এনায়েত। এমন সময় একটি গাড়ি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মার্সিডিজ গাড়ি। সেই গাড়ির সামনে পতাকাদণ্ড। তাতে পাকিস্তানি পতাকা। গাড়িটি গিয়ে দাঁড়াল লালবাগের নেজামে ইসলামী অফিসের সামনে। এনায়েত ভাবলেন, এ ব্যাটা নিশ্চয় মালিক মন্ত্রিসভার মন্ত্রী। যদি তাই হয় তাহলে তো পোয়াবারো! তিনি খুঁজে বের করলেন সহযোদ্ধা আবুলকে। দ্রুত তাঁরা তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার গোপন স্থান থেকে সংগ্রহ করলেন গ্রেনেড ও ফসফরাস বোমা। তারপর তাঁরা দুজন পরনের কাপড়চোপড় বদলে পরলেন পায়জামা-পাঞ্জাবি। মাথায় কিস্তি টুপি। লালবাগের রাস্তায় তাঁরা দুজন মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কিন্তু সেই গাড়ির ফেরার নাম নেই। ক্রমশ তাঁদের ঝুঁকি বাড়ছে। এমন সময় তাঁরা দেখতে পেলেন শিকার আসছে। লালবাগের চৌরাস্তার মোড়ে তাঁরা প্রথম চেষ্টা করলেন গ্রেনেড ছোড়ার। ব্যর্থ হলেন। গাড়ি দ্রুত সাঁ করে চলে গেল। তাঁরা গাড়ির পিছু নিলেন। পেছনে পেছনে যেতে থাকলেন। যেতে যেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের উত্তর পাশের চার রাস্তার মোড়ে (এখন সেখানে শহীদ মিনারের কারণে চার রাস্তা নেই) সিগন্যালের লাল বাতি জ্বলে উঠল। থেমে গেল গাড়ি। গাড়ির পেছনে ছিল একটি জিপ। তাতে নেজামে ইসলামী দলের বেশ কয়েকজন কর্মী। গাড়ির পাশে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে। গাড়ি ও ট্রাকের মাঝের ফাঁকে ঢুকে পড়ল মোটরসাইকেল। এনায়েত খোলা জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে ছেড়ে দিলেন পিন খোলা গ্রেনেড আর আবুল ফসফরাস বোমা। এনায়েত জানালা দিয়ে হাত ঢোকাতেই মাওলানা চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘আল্লারে! এটা কী?’ তখন বেলা আনুমানিক দুপুর একটা। গাড়িতে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রাদেশিক সরকারের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দপ্তরের মন্ত্রী নেজামে ইসলামী দলের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের। এই অপারেশনে মাওলানা ইসহাক, গাড়ির চালকসহ কয়েকজন আহত হয়। পরদিন খবরের কাগজেও এ খবর প্রকাশিত হয়।

আবুল হোসেন ১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষার্থী (এইচএসসি-প্রথম বর্ষ) ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুন মাসে ভারতে যান। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ছিলেন কেরানীগঞ্জে। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে সেখান থেকে ঢাকায় আসার পথে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকাডুবিতে তিনিসহ ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান। পরে তাঁদের সমাহিত করা হয় আজিমপুর নতুন কবরস্থানে।

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য আবুল হোসেনকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৩২৯।

আবুল হোসেনের পৈতৃক বাড়ি ঢাকা মহানগরের হাজারীবাগের ১২ মনেশ্বর রোডে। তিন ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম মো. ইসমাইল মিয়া। মা সাজেদা খাতুন।

সূত্র: দৈনিক বাংলা ১৯৭২ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২।

Tonmoy
Junior Member
Junior Member

Posts : 117
Join date : 2011-11-26

Back to top Go down

Back to top


 
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum